হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী,
ভূমিকা:
আজাদারি হল এমন এক ঐশী পথ, যা কেবল শোকপ্রকাশ নয় – বরং তা ইসলামী মূল্যবোধ, ত্যাগ ও সত্য প্রতিষ্ঠার এক জীবন্ত পাঠ। কারবালার ময়দান ছিল ন্যায়-অন্যায়ের ফয়সালার স্থান। তাই ইমাম হুসাইন (আ.)-এর জন্য আজাদারি করা মানে সেই আদর্শকে জীবিত রাখা। তবে এই ইবাদত যদি শিষ্টাচারহীন হয়, তবে উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে।
১. নিয়ত: ইবাদত না ফ্যাশন?
অনেক সময় দেখা যায়, কেউ আজাদারির পোশাক পরে, মাতমে অংশ নেয় – কিন্তু তার ভিতরে গভীর উপলব্ধি নেই। কেউ কেউ আজকাল শুধুই ছবি বা ভিডিও তুলে শোকের নামে নিজেকে প্রদর্শন করে।
প্রশ্ন: আমরা কি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আজাদারি করছি, নাকি মানুষের চোখে পুণ্যবান হতে?
শুদ্ধ নিয়ত হল আজাদারির প্রথম ও প্রধান শর্ত।
২. আচরণ ও শালীনতা:
ইমাম হুসাইনের শোক সভায় চেঁচামেচি, হাসি-ঠাট্টা, অপমানজনক পোশাক বা অশালীন কথাবার্তা কখনও মানানসই নয়। আজাদারি মানে আত্মসংযমের অনুশীলন।
নারী-পুরুষের পর্দা, সংযত ভাষা, ও মনোযোগের সাথে মজলিসে অংশগ্রহণ জরুরি।
৩. নওহা ও মাতমের আদব:
আজকাল অনেক জায়গায় দেখা যায় – কিছু নওহা বা লাঠি-মাতমে এমন কিছু সুর ও শব্দ থাকে যা গান বা বাজনার মত শোনায়। এটি শিয়া আলেমগণ হারাম ঘোষণা করেছেন।
ইমামের নাম নিয়ে পবিত্রতা রক্ষা করাই ঈমানদারের কাজ।
৪. সামাজিক দিক:
আজাদারি শুধু ব্যক্তিগত ইবাদত নয়। এটা সমাজে বিপ্লব ঘটাতে পারে। কারবালার মেসেজ হল – অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো, নির্যাতিতদের পাশে দাঁড়ানো, ও সত্যের পথে দৃঢ় থাকা।
প্রশ্ন: আজ আমরা ইমামের প্রেমে মাতম করি, কিন্তু কি আমরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াই?
৫. আত্মিক ফলাফল:
আজাদারি যদি আন্তরিক হয়, তাহলে তা হৃদয়কে নরম করে, চোখে অশ্রু এনে দেয়, গুনাহ থেকে মুক্তির অনুভব জাগায়। ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন: “যে ব্যক্তি আমাদের জন্য এক ফোঁটা অশ্রু ফেলে, সে জান্নাতবাসী।”
সুতরাং, আজাদারির মাধ্যমেই আমাদের আত্মা নির্মল হতে পারে – যদি তা হয় যথাযথ আদবসহ।
উপসংহার:
আজাদারি শুধু অতীত স্মরণ নয়, বরং বর্তমানকে জাগ্রত করার পন্থা। এটি আল্লাহর পথে ফিরে আসার ডাক। তাই আসুন, আমরা যেন আজাদারির আদব, আন্তরিকতা ও ভাবগম্ভীরতা বজায় রেখে ইমাম হুসাইন (আ.)-এর আহ্বানে সাড়া দিই।
রিপোর্ট: সৈয়দ মুরাদ
আপনার কমেন্ট